Tuesday, September 3, 2024

অভিশপ্ত কবিজন্ম

 


চুপিসারে কথা বলতে নেই, যা কথা হবে

রেখে যাব ছাতিমের ডালে, ভরা বর্ষার দিনে

সেই যে একদিন সূর্যাস্তের কিছু পরে  বাড়ি থেকে 

বেরিয়েছিলে তুমি, অন্ধকার আড়াল করে

তুমি ছুঁয়েছিলে ছাতিম গাছের ছায়ায়, একটা আকুল শরীর

এখনো পাখির ঠোঁটের কোণে শুকনো পাতার মর্মর 

হাওয়া দিয়ে যায় শিরশির, মনে করলেই পাগল 

আমি তো চেয়েছিলাম পাখি হতেই, পরজন্মে

আজ পাতায় পাতায় তাই প্রতিটি জন্মবদলের রঙ

দেখো তো চিনতে পারো কি না, ওই বৃষ্টির জলের স্পর্শ

আর কোন আগুনে পুড়িয়ে ছিলে সে মুহূর্ত … 

নিজেই জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গেছ সেদিন, ডালপালা 

সাক্ষী ছিল, আছে, এক সুতীব্র আকর্ষণে, মেলে 

ধরেছিলেম ডানা, পুড়তেই তো চেয়েছিলাম আমি 

আমাদের যৌথ প্রেম লিখে গেছে অসমাপ্ত গান সে ডানায় 

শব্দ পুড়ে আঁকিবুঁকি 

                         নদী হয়ে মিশে গেছে কানায় কানায়




যদি ক্লান্ত হই, যদি চোখে লেগে আসে ঘুম, যদি 

কাজল ধেবড়ে যায়, তবে তুমি উড়িয়ে দিও সেসব চিঠিদের 

যদি মেঘ নেমে আসে যদি অপেক্ষায় পাথর হয়ে যায় 

সে প্রেমিক, ওই হাতে মুখ ঢেকে দিও তুমি … 

যে হাতে ছুঁয়েছ আগুন, যে হাতে নিয়েছ বিদ্যুৎ 

যে হাতে দিয়েছ পালক, পাখিদের ডানায় 

সে হাতেই নিয়ে এসো জল , কুয়াশাভেজা ভোরে  

শব্দপতনের সায়ংকালে ভীষণ প্রয়োজন তোমায় 

হে আবেগ, শূন্য ঘরে তোমার অভিসার 

মেঘপরীদের সাথে, বন্ধুতা পাতাও তুমি ফুলে ওঠা 

তীব্র জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণি ঝড়ের সাথে 

এভাবেই, ঠিক এভাবেই ঘিরে ধরে থাকো  আমায়

তোমার শরীর থেকে টুপটাপ ঝড়ে পরে শব্দেরা 

কুড়োতে পারি না আমি, ভুল হয়ে যায় নিজ চোখে দেখা 

দুর থেকে আরও দুরে চলে যেতে থাকে 

                                            একগুচ্ছ লেখা   


 

মাথার ভেতর রোজ নিয়ে বাঁচি অবাধ্য এক লেখা 

বৃষ্টি এলে টের পাই, সে লেখা উত্যক্ত করে নিরুপায় 

একটা দুটো পঙক্তি এসে বসে গাছের ডালে, তবু 

অসময়ের ডাকে বাইরে যেতে নেই , কী কুক্ষণেই না 

ধরেছিলাম হাত, চুম্বনের আকর্ষণে, মৃত্যুকেও তাচ্ছিল্য 

করেছি আমি, একটা ধানের খেতের পাড়ে শীতের 

সকালে সেই যে ছোট্ট ফড়িং মেয়েকী কুক্ষণেই না 

দেখেছিলেম তার সর্বাঙ্গে বাংলাভাষার ওম 

যাকে তুমি প্রেম বলো আমি বলি অভিশাপ … 

আমি তাকে ভাসিয়ে দিই লেখার খাতায় 

কেউ কেউ ভেসে ওঠে, কেউ কেউ ডুবে যায় অতলে 

শরীর থেকে শরীরে, পাতা থেকে পাতায়

গাছ থেকে গাছে, সারি সারি ঠায় দাঁড়িয়ে 

আমাদের  গাছজন্ম , আমাদের খড় কুটো শূন্যতা 

নদী হয়ে পড়ে থাকে শাদা পাতায় 

অভিশপ্ত কবিজন্ম বয়ে নিয়ে যাই দুর থেকে দুরে 

আমি আর তুমি, কতটা পালাতে পারি দুই ভবঘুরে