Monday, January 14, 2019

এক্কা দোক্কা সহজপাঠ

আলপথ ধরে দৌড়তে দৌড়তে ছুটে আসা …
কড়াইশুটির মাঠ ধরে, দিগন্তের ওপার থেকে
ছুটে আসা…সে এক অবুঝ বালক… পায়ে
মোজা নেই, মাথায় শীতের টুপি নেই…
সোমবারের হাট থেকে কিনে আনা গরম জামা
কমদামি ফ্লানেলের কাপড়; ডোরাকাটা
শীতের শিশিরভেজা পায়ে লেগে থাকা মাটি
অগ্রাহ্য করে ছুটে আসা ধেয়ে … কোথাও কোনও
লোকজন নেই, কেউ কোথাও নেই… শুধু পথের
পড়ে থাকা খোলাম কুচি, দূর্বাদল … আলপথ বেয়ে
নেমে আসা নতুন ধানের শীষ আর সকালের প্রথম রোদ্দুর
সারারাত জেগে থাকা সবজির মাঠ …আলু কপি পালংয়ের ক্ষেত…
শীতের ঠান্ডা হিমে থরথর তবুও অবাধ্য ছুটে আসা,
খেজুরগাছ, তুমি কেন আটকাওনি তাকে

সে সব স্বপ্ন ছিল, সে সব আগেকার দিন…
ঘুমভাঙা চোখে জবুথবু ডুবে যাওয়া… ঠান্ডা জলে স্নান
কাঁচা হলুদ বেঁটে গায়ে মাখা… শ্রীপঞ্চমী সকালে
এটাই রীতি নাকি, দূর্বিনীত ফরসা হওয়ার লোভে…
বড়জেঠিমার গাঁদাফুল… লাউয়ের মাচা আর বোরো ক্যালেনডুলা
কী যেন বাকি পড়ে আছে ফেলে আসা রাস্তায়…
ভীরু ভীরু মনে পদস্খলন … উঁকি দিয়ে দেখা শাড়িপরা মেয়েদের
রাতভোর জেগে থাকা স্বপ্নেরা, ও পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া …
তোমাদের যৌথ দৃষ্টিপাত … তোমাদের কুয়াশায় ভেসে যাওয়া
চড়কের মাঠ, দিন শেষে পড়ে পাওয়া অনামি বাঁশি
তারাখসা আর বড় ব্যস্ত উল্কারা… সবাই দেখেছে তোমাদের
সবাই জানে তুমি কেন লজ্জায় লাল হয়ে যাও
সবাই বুঝেছে কে হয় অই অবাধ্য বালক তোমার আর
কী কথা চুপিচুপি রেখে যাও তুমি আলপথে…


মনে মনে আমি সেই, মনে মনে অবুঝ বালক
ও কৃষ্ণচূড়া মেয়ে, তোমার জন্য রেখে যাই আদিগন্ত কবিতার মাঠ
কুয়াশারভেজা ভোর, শীতের আলপথে হেঁটে যাই আমি
আমাদের প্রাথমিক প্রেম, আমাদের একাকার এক্কা দোক্কা সহজপাঠ

সূর্যাস্ত নামক স্বগত


স্বপ্ন হয়ে এলি সেদিন ঘুমের ঘোরে
সেই আগের মতই, কপালে আলতো
                                 কয়েকটা ছোট চুল
নাকের ওপর হালকা একটু ঘাম,
                                চোখে বড়ই ব্যস্ততা
আমি তখন সাঁকোর রেলিঙের ধারে দাঁড়িয়ে
একটা গভীর সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষা করছি



ব্যস্ত ভাবেই হাত রাখলি কাঁধের ওপর
“আচ্ছা আপনি বুঝি আর লেখেন না?”
চমকে পিছন ফিরে তাকাতেই
তোর কপালের মস্ত লাল টিপে চোখ আটকালো
যেন একটা প্রতিবিম্ব - সূর্যাস্তেরই হবে


একটা খেয়া পারাপার করছিল সাঁঝবিকেলে
দূর থেকে ভেসে আসছিল আপনমনে গুনগুন
আমি ভাবলাম পাখি হবে হয়ত, ঘরে ফেরার পালা
তুই বললি চলুন, দেরি হয়ে যাচ্ছে, সর্বনাশের খেলা
যেন সূর্যাস্ত নয়, এক গভীর ডুবে যাওয়ার আগে
তীব্রভাবে আঁকড়ে ধরা, রক্তিম আলো মাখামাখি
                                                                 সর্বাঙ্গে


অথচ বেশ তো ভালই চলছিল, তীরের এপার
                                                        আর ওপার
ভয়ে ভয়ে চোখ রাখা, ডুবে যাওয়া, ভেসে ওঠা
যেন এক অস্থির শুশুক, আর অপার বিস্ময়
হেঁটে যাওয়া অনন্তকাল, সাঁকোর ওপর, ট্রাপিজের খেলা
সমাজ সংসার মিলে মিশে একাকার, আত্মকথন


কেউ কোথাও নেই, মানুষজন, গাছপাথর আর উল্কা বৃষ্টি
স্বপ্ন হয়ে এলি সেদিন ঘুমের ঘরে, শেষ দেখা হল না
                                                     স্বপ্নই থেকে গেলি